ডিজিটাল মার্কেটিং(Digital Marketing) কি?
একটা সময় ছিল যখন কোনো পন্য সামগ্রির প্রচার প্রচারনার জন্য মানুষের ঘরে ঘরে অথবা দোকানে যাওয়ার প্রয়োজন হতো। এতে করে যেমন নষ্ট হতো অনেক সময় ঠিক তেমনি ব্যায় হতো অর্থ। কিন্তু বর্তমান সময়ে প্রযুক্তিগত উন্নয়নের ফলে এগুলো এখন সহজ হয়ে গিয়েছে। এখন আর সেভাবে সব জায়গায় ঘুরে ঘুরে কোনো পন্যের প্রচার চালাতে হয় না, এখন ইন্টারনেট সংযোগ এবং একটি ডিভাইসের(মোবাইল/ল্যাপটপ) মাধ্যমে সেটি করা সম্ভব আর এই প্রক্রিয়ার নাম হলো ডিজিটাল মার্কেটিং।
আপনি যদি ডিজিটাল মার্কেটিং সম্পর্কে জানতে আগ্রহী হন তাহলে পুরো আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
ডিজিটাল মার্কেটিং(Digital Marketing) কি?
ডিজিটাল মার্কেটিং হলো এমন একটি মাধ্যম, যার দ্বারা আমরা যেকোনো প্রোডাক্ট বা সার্ভিস ঘরে বসেই কিছু সময়ের মধ্যে লক্ষ লক্ষ মানুষের কাছে প্রচার করতে পারি। সহজ ভাষায় বলতে গেলে অনলাইনের মাধ্যমে যেই মার্কেটিং করা হয় তাকে ডিজিটাল মার্কেটিং বলে।
ডিজিটাল মার্কেটিং এর মূল উদ্দেশ্য হলো, ইমেইল, সোশাল মিডিয়া, মোবাইল মার্কেটিং, অনলাইন কাস্টমারস কমিউনিটি, ওয়েবিনার এবং অন্যান্য ভিডিও কন্টেন্ট গুলোর দ্বারা লক্ষ্যকৃত গ্রাহকদের কাছে ব্যবসা, এবং পণ্য বা পরিষেবা গুলোকে প্রচার করে সেগুলো বিক্রি করার চেষ্টা করা। আসা করছি বুঝতে পেরেছেন ডিজিটাল মার্কেটিং অর্থ কি।
ডিজিটাল মার্কেটিং এর শাখা সমূহ:
ডিজিটাল মার্কেটিং এর অনেক শাখা রয়েছে। তবে কিছু বহুল পরিচিত এবং কার্যকারি কিছু শাখা সম্পর্কে আলোচনা করা হলোঃ
সার্চ ইঞ্জিন মার্কেটিং
বিভিন্ন কোম্পানি বা business owners রা Google Adword দ্বারা গুগল সার্চ ইঞ্জিন বা অন্য অনলাইন সার্চ ইঞ্জিন গুলিতে বিজ্ঞাপন দেখিয়ে ব্লগ বা ওয়েবসাইটের দ্বারা নিজেদের পন্য বা সেবার মার্কেটিং করে থাকেন, আর এই প্রক্রিয়াটি হলো “Search Engine Marketing“.
সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন (SEO)
ডিজিটাল মার্কেটিং এর একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো এসইও । এসইও পূর্ণরূপ সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন (search engine optimisation)। সংক্ষেপে এসইও(SEO) বলা হয়।
এসইও SEO কি?
এসইও হচ্ছে আমাদের অ্যাপস বা ওয়েবসাইট গুলোকে বিভিন্ন সার্চ ইঞ্জিন অর্থাৎ গুগল বিনং ইয়াহু এই সার্চ ইঞ্জিন ফ্রেন্ডলি করে তোলার যে প্রক্রিয়া কে বলা হয় এসইও।
মনে করুন একটি বিষয়ের উপর আর্টিকেল পড়তে চান, তাহলে আমরা সাধারণত যে কাজটি করি তা হল google এ আমরা ঐ বিষয়ের ওপর কিছু লাইন লিখে search করি। এখন লক্ষ্য করুন আমরা সার্চ বাটনে ক্লিক করার পর গুগল কিছু ওয়েবসাইট এর নাম দেখায় যেখানে আমরা ঐ টপিকের ওপর আর্টিকেল পেতে পারি। এভাবে গুগল প্রতি পেইজে এ ১০টি ওয়েরসাইটএর নাম দেখায়।
এখন আপনার মনে প্রশ্ন জাগতেই পারে কেন কিছু সাইট প্রথম পেজে আসলো, আর কেনইবা বাকি ওয়েবসাইটগুলো পেছনের পেজে গেলো – google কি ইচ্ছা মত করছে নাকি এর পেছনে অন্য কোন কারণ আছে?
নিশ্চয় প্রথম পেজের সাইটগুলোর মধ্যে বিশেষ কিছু আছে, যা অন্য সাইটগুলাতে নাই। এই বিশেষ কিছু এ্যাড করার নামই হলো SEO, যার মাধ্যমে আপনিও আপনার ওয়েবসাইটটিকে প্রথম পেজে নিতে পারেন। আর প্রথম পেলে আনতে পারলে এখান থেকে আপনি ফ্রিতে অনেক ভিজিটর পাবেন।
সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন প্রধানত দুই প্রকার:
অন পেজ এসইও
অফ পেজ এসইও
1.অন পেইজ এসইও:- একটি ওয়েবসাইট কে প্রথম পেইজে আনার জন্য ওয়েবসাইটের ভিতরে যে কাজগুলো করতে হয় তাকে অন পেজ এসইও বলে।
2.অফ পেইজ এসইও:- অফ পেজ এসইও হচ্ছে ওয়েবসাইটের বাইরের কাজ। ওয়েবসাইটে পরিচিত লাভ করা বিভিন্ন লিঙ্ক বিল্ডআপ করাই হচ্ছে অন পেজ এসইও।
সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং
সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং হলো এমন একটি মার্কেটিং এর উপায় যেখানে বিভিন্ন অনলাইন সোশ্যাল মিডিয়া ওয়েবসাইট যেমন ফেসবুক, টুইটার বা ইন্সটাগ্রাম ইত্যাদি ব্যবহার করে কোনো কোম্পানির ব্র্যান্ড, প্রোডাক্ট বা সেবা প্রচার করা হয়। এই প্রক্রিয়াটির নাম হলো সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং
অনলাইন বিজ্ঞাপন
অনলাইন বিজ্ঞাপন হলো কোনো প্রোডাক্ট সেল করার জন্য অনলাইনের মাধ্যমে এ্যাড দিয়ে ভিজিটর আনা বা পন্য বিক্রয় করা। এটা আসলে ভিজিটর অ্যাকশন নেয় অর্থাৎ যখন কোনো ভিজিটর কোন এ্যাডে ক্লিক করে তখনই মূলত যারা অ্যাড পরিচালনা করে তাদেরকে একটি নির্দিষ্ট এমাউন্ট পেয় করতে হয়।
এই অনলাইন বিজ্ঞাপন বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। যেমন:
Cost Per Action (CPA)
Cost Per Action অর্থ হলো “প্রতিটার কাজের জন্য টাকা”। এখানে কেউ একটা কিছু কাজ করবে তার বিনিময়ে আপনি কিছু টাকা পাবেন। Cost Per Action একধরনের এডভ্যাটাইজিং মেথড । বা এমন একটা অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং, যেটার মাধ্যমে আপনি কোনো পন্য বিক্রির পাশাপাশি ছোট কোনো কাজ যেমন ইমেইল সাবমিট বা ডাউনলোড ইত্যাদি কাজের মাধ্যমে আয় করতে পারবেন।
Cost Per Click (CPC)
CPC হচ্ছে ভিজিটর যখন কোন এডে ক্লিক করবে এবং যখন সে ওয়েবসাইট ভিজিট করবে তখনই মূলত যারা অ্যাডভারটাইজার তাদেরকে নির্দিষ্ট একটি এমাউন্ট পে করা হয় আর একেই বলে CPC Marketing.
Cost Per View (CPV)
Cost Per View বা CPV হলো কোনও বিজ্ঞাপন থেকে প্রাপ্ত ভিউ সংখ্যার ভিত্তিতে ভিডিও বিজ্ঞাপনের জন্য চার্জ করার একটি পদ্ধতি। মানে কোনো প্রোডাক্টের এ্যাভারেজ ভিউ সংখ্যা কাউন্ট করে টাকা পেইড করা হয়।
Display Advertising
আমরা যখন কোন ওয়েবসাইট ভিজিট করি তখন কিন্তু আমরা সেই ওয়েবসাইট এর ফুটারে বা ওয়েবসাইটের সাইডবারে অনেক ধরনের ব্যানার অ্যাড দেখতে পাই এটা মনে হচ্ছে মূলত ডিসপ্লে এডভার্টাইজিং।
Email মার্কেটিং
ইমেইল মার্কেটিং ডিজিটাল মার্কেটিং এর একটি অংশ। যেখানে বিভিন্ন প্রোডাক্টের সম্পর্কে বিস্তারিত লিখে বিভিন্ন মানুষের কাছে সেই ইনফরমেশনগুলো মেইলের মাধ্যমে পাঠানো হয় আর এই মাধ্যমকে বলা হয় ইমেইল মার্কেটিং।
ভিডিও দ্বারা মার্কেটিং
ইউটিউবে চ্যানেল বানিয়ে বা ফেইসবুকে পেইজ বানিয়ে সেটাতে কোনো প্রোডাক্ট বা সেবা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য ভিডিও ক্লিপের মাধ্যমে মানুষের কাছে পৌছে দেয়ার প্রক্রিয়াকে বলা হয় ভিডিও মার্কেটিং।
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং
এফিলিয়েট মার্কেটিং ডিজিটাল মার্কেটিং এর এমন একটি মাধ্যম, যেখানে বিভিন্ন কোম্পানিরা কমিশন এর লোভ দেখিয়ে বিভিন্ন অনলাইন ওয়েবসাইট বা ব্লগে লিংক যুক্ত করার মাধ্যমে তাদের ব্র্যান্ড বা পন্যের মার্কেটিং বা প্রমোশন করেন। এবং যখনি কোনো কাস্টমার সেই লিংকে প্রবেশ করে পন্যটি ক্রয় করে ঠিক তখনই সেখান থেকে কিছু পরিমান কমিশন আপনি পাবেন। এই মার্কেটিং প্রক্রিয়ার নাম হলো অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং।
ব্লগ বা ওয়েবসাইট দ্বারা মার্কেটিং
আজ লোকেরা সব ধরণের ছোট বড় প্রশ্নোর উত্তর ইন্টারনেটে সার্চ করেন। এখন, আপনি যদি নিজের কোম্পানি, business বা product এর সাথে জড়িত প্রশ্নোর উত্তর বা সমাধান একটি ব্লগ বা ওয়েবসাইট বানিয়ে আর্টিকেল এর মাধ্যমে প্রকাশ করে সেটা মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে পারেন, তাহলে সেই blog বা ওয়েবসাইটে আশা ভিসিটর বা ট্রাফিক আপনার সেবা বা প্রোডাক্টগুলো প্রমোশন করার অনেক ভালো মাধ্যম হতে পারে।
মোবাইল মার্কেটিং
মোবাইল মার্কেটিং হলো ডিজিটাল মার্কেটিং এর একটি কৌশল যেটা ব্যবহার করে আপনি আপনার হাজার হাজার শ্রোতাদের সাথে তাদের মোবাইল ডিভাইস এর দ্বারা জড়িত হতে পারবেন। যেমন, স্মার্টফোন বা ট্যাবলেট ইত্যাদি। মোবাইল মার্কেটিং এর ক্ষেত্রে মূলত, SMS বা MMS messages, Social Media Notifications, Mobile App Alerts ইত্যাদি।
Influencer Marketing
এই মার্কেটিং পন্থা একটু ভিন্ন ধরনের। এই মার্কেটিং এর জন্য প্রয়োজন সোশ্যাল মিডিয়াতে বহু সংখ্যক ফলোয়ার। সাধারণত এই মার্কেটিংটি সেলিব্রিটিদের কিছু টাকার বিনিময়ে হায়ার করার মাধ্যমে করা হয়। কারণ তাদের সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে একটু আলাদা মান রয়েছে তারা কোনে ব্র্যান্ডকে প্রোমোট করলে সেখান থেকপ অনেক সংখ্যক ভিজিটর পাওয়া যায়। এই প্রক্রিয়ার নাম হলো Influencer Marketing.
ডিজিটাল মার্কেটিং কেন শিখব?
দেখুন একটি একটি নতুন কোনো প্রোডাক্ট বা কোম্পানির জন্য মার্কেটিং করা খুবই জরুরি আর এই বিষয়টিকে সহজতর করে দিয়েছে এই ডিজিটাল মার্কেটিং। আর ডিজিটাল মার্কেটিং প্লাটফর্মে কাজের অভাব নেই। আপনি যদি একজন দক্ষ ডিজিটাল মার্কেটার হতে পারেন তাহলে,
আপনি কোনো কোম্পানির সাথে ডিজিটাল মার্কেটার পদে চাকুরী করতে পারবেন, অনলাইন ইন্টারন্যাশনাল মার্কেটপ্লেস গুলো তে ফ্রিল্যান্সিং করে ভালো পরিমানে অর্থ উপার্জন করতে পারবেন। শুধু কি তাই? আপনার যদি কোনো কোম্পানি বা ব্যাবসা থাকে তবে ডিজিটাল মার্কেটিং আপনাকে নিয়ে যাবে সাফল্যের চুড়ায়।
আপনি যদি ফ্রিল্যান্স জব নিউজ পোর্টাল গুলো যেমন- linkedin.com, naukri.com, indeed.com ইত্যাদিতে একটু ঘাটাঘাটি করেন তবে বুঝতে পারবেন ডিজিটাল মার্কেটিং এর জব সেক্টরগুলে কতটুকু মানসম্মত।
ডিজিটাল মার্কেটিংএ কি কি শেখানো হয়?
একটি ডিজিটাল মার্কেটিং কোর্স-এর মধ্যে মূলত নিচে বলে দেওয়া বিষয় গুলো কভার করা হয়।
- Search engine optimization (SEO) শিখতে হবে।
- Pay-per-click advertising (PPC) শিখতে হবে।
- Cost Per View (CPV) শিখতে হবে।
- Cost Per Click (CPC) শিখতে হবে।
- Cost Per Action (CPA) শিখতে হবে।
- Display Advertising শিখতে হবে।
- Social media marketing শিখতে হবে।
- Content marketing শিখতে হবে।
- Email marketing শিখতে হবে।
- Mobile marketing শিখতে হবে।
- Web analytics শিখতে হবে।
- E-commerce marketing শিখতে হবে।
- Affiliate marketing শিখতে হবে।
- Video marketing শিখতে হবে।
- Influencer automation শিখতে হবে।
- Marketing automation শিখতে হবে।
ডিজিটাল মার্কেটিং কিভাবে শিখব?
প্রথমেই আপনাকে basics of digital marketing-এর বিষয়ে জানতে হবে। এবং এর কৌশল গুলোতে কি কি জড়িত থাকছে তার বেসিক ধারণা নিয়ে নিন।
অনলাইন কোর্স করার মাধ্যমে:
ইন্টারনেট থেকে ডিজিটাল মার্কেটিং শেখার জন্য আপনি আমাদের সাথে অল্প কিছু অর্থের বিনিময়ে যোগদান করতে পারেন এবং তাদের কোর্সটি সম্পুর্ন করতে পারেন।
ইউটিউব:
ইউটিউব হচ্ছে একটি ওপেন সোর্স যার মাধ্যমে আপনি হাজার হাজার ভিডিও টিউটোরিয়াল পাবেন ডিজিটাল মার্কেটিং এর ওপর। আপনি চাইলে সেখান থেকে আপনার পছন্দমত মেন্টর সিলেক্ট করে শেখা শুরু করে দিতে পারেন।
মূল টপিক গুলোতে ফোকাস:
আপনাকে ভালো করে দেখে কোর্স নিতে হবে যেখানে SEO, PPC, social media, content marketing, email marketing ইত্যাদির মতো মুখ্য বিষয় গুলো বুঝানো হবে।
ব্যবহারিক অভিজ্ঞতা:
ডিজিটাল মার্কেটিং শেখার জন্য ব্যবহারিক অভিজ্ঞতার গুরুত্ব অনেকটাই বেশি। তাই যা যা শিখছেন সেগুলো প্রাকটিক্যাল ভাবে করতে ও বুঝতে হবে। শুরুতে নিজের একটি personal website বা blog তৈরি করুন এবং বিভিন্ন ডিজিটাল মার্কেটিং কৌশল গুলো অনুশীলন করুন। এবং এর মাধ্যমে আপনি হয়ে উঠতে পারবেন একজন ডিজিটাল মার্কেটার।