
কি-বোর্ডে অক্ষরগুলো এলোমেলো থাকে কেন?
এটি দেখতে এলোমেলো মনে হলেও, এর পেছনে একটি ঐতিহাসিক কারণ রয়েছে, যা প্রথম টাইপরাইটার যন্ত্রের সময়ের। কি-বোর্ডের এই বিন্যাসটিকে বলা হয় QWERTY (কোয়ার্টি), কারণ এর প্রথম সারির শুরুতেই এই ছয়টি অক্ষর রয়েছে। কারণটি খুব সহজ:

বর্তমানে আমরা যে কি-বোর্ড ব্যবহার করি, সেটির বিন্যাসকে QWERTY (কোয়ার্টি) বলা হয়। কি-বোর্ডে অক্ষরগুলো এলোমেলো থাকার পেছনে মূলত ঐতিহাসিক কারণ রয়েছে, যা প্রথম টাইপরাইটার আবিষ্কারের সঙ্গে সম্পর্কিত।
আজ থেকে প্রায় ১৫০ বছর আগে যখন প্রথম টাইপরাইটার তৈরি হয়েছিল, তখন অক্ষরগুলো বর্ণানুক্রমিকভাবে (A, B, C, D…) সাজানো ছিল। কিন্তু সমস্যা হলো যখন কেউ খুব দ্রুত টাইপ করতেন, তখন টাইপরাইটারের ভেতরে থাকা ধাতব রডগুলো (যা অক্ষরকে কাগজে ছাপাতো) একে অপরের সাথে ধাক্কা লেগে আটকে যেত বা জ্যাম হয়ে যেত। এর ফলে টাইপ করা বন্ধ হয়ে যেত এবং যন্ত্র নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকত।
এই সমস্যা সমাধানের জন্য ক্রিস্টোফার ল্যাথাম শোলস নামে এক আবিষ্কারক অক্ষরগুলোর বিন্যাস পাল্টে দেন। তিনি গবেষণা করে দেখলেন যে, যে অক্ষরগুলো ঘন ঘন একসাথে ব্যবহৃত হয় (যেমন: ইংরেজি ‘TH’, ‘ER’ বা ‘OU’), সেগুলোকে কাছাকাছি না রেখে দূরে দূরে ছড়িয়ে দিলে রডগুলো ধাক্কা লাগার সুযোগ কম থাকে। এই নতুন বিন্যাসের উদ্দেশ্য ছিল টাইপ করার গতি কমানো নয়, বরং যান্ত্রিক জ্যামিং বন্ধ করা। এই নতুন বিন্যাসে সহজেই টাইপ করা যেত এবং রডগুলো আটকে যেত না। এই QWERTY বিন্যাসটি টাইপরাইটারের জগতে দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। বছরের পর বছর মানুষ এটি ব্যবহার করতে অভ্যস্ত হয়ে যায়। পরে যখন কম্পিউটার এবং ল্যাপটপ আসে, তখন নতুন করে বিন্যাস পাল্টানো হয়নি। কারণ কোটি কোটি মানুষ এই QWERTY বিন্যাসে অভ্যস্ত ছিল। তাই আজ আধুনিক প্রযুক্তিতে কোনো যান্ত্রিক সমস্যা না থাকা সত্ত্বেও, পুরোনো অভ্যাস ও এটিকে একটি মানদণ্ড হিসেবে ধরে নেওয়ার কারণেই কি-বোর্ডে অক্ষরগুলো এলোমেলোভাবে সাজানো আছে।
এক কথায়, আপনার কি-বোর্ডের এলোমেলো অক্ষরগুলো হলো টাইপরাইটারের একটি পুরনো সমস্যার বুদ্ধিদীপ্ত সমাধান, যা আজও বিশ্বজুড়ে প্রচলিত আছে।